রেলের ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্তে দুদক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রেলমন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে দুদক ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাশাপাশি ৭৫টি প্রতিষ্ঠানে ইকবাল হোসেনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছে। এ ছাড়া তাকেও চিঠি দিয়েছে দুদক। তবে এখনও চিঠির উত্তর দেয়নি ইকবাল হোসেন।

সূত্র জানায়, রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনীতে শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৭ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে এ নিয়োগ প্রথমে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতির সুবিধার্থে পূর্বাঞ্চলে নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিয়োগ কমিটিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামকে সদস্য সচিব ও কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, এসপিও সিরাজুল্লাহ, কমান্ড্যান্ট ফুয়াদ হাসান পরাগকে সদস্য করা হয়। কমিটির অনুমোদন দিয়ে তদারকি না করায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমদও এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

২০১৮ সালের শুরুতে এ নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয় একই বছরের ২৯ আগস্ট। ফল প্রকাশের পর অসংখ্যা প্রার্থী অভিযোগ তুলেন, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

নিয়োগে দুর্নীতি হয় যেভাবে

সূত্র জানায়, ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগের মধ্যে সিরিয়ালে ১৪ নম্বর কুমিল্লার গোলাম মোস্তফার ছেলে শাহাদাত হোসেনের চাকরি হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। অথচ তার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেই, এমনকি তার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পান। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর বর্তমানে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় ঢাকা বিভাগের ৫ জন চাকরি প্রার্থীকে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের ১১জন প্রার্থীকে নেওয়া হয় কোটা বহির্ভূত। অর্থাৎ কোটায় লোক পাওয়া যায়নি বলে এ ১১ জনকে নেওয়া হয়। অথচ কোটায় লোক ছিল। এভাবেই ১৮৫ সিপাহী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি তথ্য উঠে আসছে ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ আসার পর ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তথ্য পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

আমেরিকায় ১৫ কোটি টাকা পাচার করে ইকবাল হোসেন

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, অবৈধভাবে উপার্জিত প্রায় ১৫ কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেছে ইকবাল হোসেন। এসব টাকা ইকবাল হোসেনের ব্যক্তিগত কোনো হিসাবে লেনদেন করেননি। ব্যবহার করেছেন আমেরিকা প্রবাসী বোন ও বোনের জামাইয়ের হিসাব নম্বর।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক লুৎফল কবির চন্দন সাংবাদিককে বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তার সব বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তার সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এদিকে দুর্নীতির বিষয়ে জানতে ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর